সৈয়দ হককে উৎসর্গ উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব
পঞ্চমবারের মতো আয়োজিত হতে যাচ্ছে ‘বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব’। এ বছরও উৎসব চলবে পাঁচদিন। আগামী ২৪ থেকে ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবে থাকছে ধ্রুপদী সংগীতের নানা নিদর্শন। উপমহাদেশে তথা বিশে^ সবচেয়ে বড় পরিসরের উচ্চাঙ্গসংগীত আসরটি এবারও বসবে ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে। প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে উচ্চাঙ্গসংগীতের এই উৎসবটি। গতকাল সোমবার ঢাকায় দ্য ওয়েস্টিন হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে অনুষ্ঠানের দিনণ ঘোষণা করে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন। সম্মেলনে বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের পে জানানো হয়, এবারের উৎসবটি উৎসর্গ করা হয়েছে বাংলাদেশের সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের স্মৃতির প্রতি। বেঙ্গল ফাউন্ডেশন শাস্ত্রীয় সংগীতের ঐতিহ্যগত গঠন ও কৌশলের প্রতি সাধারণ শ্রোতাদের আগ্রহ বাড়াতেই ২০১২ সালে উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব আয়োজনের উদ্যোগ নেয়। সেই থেকে প্রতিবছরের শীতকালে এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের, ফাউন্ডেশনটির মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী, স্কয়ার গ্রুপ ও মাছরাঙা টেলিভিশনের পে ছিলেন অঞ্জন চৌধুরী এবং ব্র্যাক ব্যাংকের হেড অব কমিউনিকেশন ও জারা মাহবুব।
বরাবরের মতো এবারও ধ্রুপদী ও নৃত্যের প্রধান প্রধান শাখার উল্লেখযোগ্য পরিবেশনা শ্রোতা-দর্শকদের জন্য উপস্থাপন করা হবে। এবারের উৎসবে বাংলাদেশের ১৬৫ শিল্পী নানা বাদ্যযন্ত্র দিয়ে মুগ্ধ করবেন। উৎসবের উদ্বোধনী পর্বে স্বনামধন্য নৃত্যশিক শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায় নৃত্যনন্দন দলে প্রায় ৬০ জন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মূল গান ও ভাঙ্গা গানে মণিপুরি, ভরতনাট্যম, ওড়িশি ও কত্থক রীতির রূপায়ণ পরিবেশন করবেন। পাশাপাশি থাকবে নৃত্যশিল্পী মুনমুন আহমেদ, বিশিষ্ট উচ্চাঙ্গসংগীত শিল্পী প্রিয়াংকা গোপের নির্দেশনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের শিার্থীরা শাস্ত্রীয়সংগীত পরিবেশনাসহ আরও বেশ কিছু পরিবেশনা। এ ছাড়া উৎসবের বিভিন্ন দিন দলীয়ভাবে বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের শিক-শিার্থীদের পরিবেশনাও থাকবে।
বিদেশি শিল্পীদের মধ্যে এ বছর উৎসবে যোগ দিতে আসছেন প্রবাদপ্রতিম বিদুষী গিরিজা দেবী। প্রায় সত্তর বছরের সংগীতজীবনে বেনারস ঘরানার এই শিল্পী খেয়াল, ঠুমরি, টপ্পায় তুলে এনেছেন পূরব অঙ্গের অনির্বচনীয় রূপ ও রঙ। অতুলনীয় শিল্পশৈলী ও গভীর সাধনার জন্য ভারত সরকার তাকে সর্বোচ্চ সম্মান পদ্মবিভূষণ প্রদান করেছে।
এ ছাড়া ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর ছেলে বিশ্ববিখ্যাত সরোদিয়া ওস্তাদ আলি আকবর খাঁয়ের নাতি ওস্তাদ আশিষ খাঁ সরোদ বাজাবেন বিখ্যাত তবলাবাদক প-িত বিক্রম ঘোষকে সঙ্গে নিয়ে। আরও থাকবে জয়পুর আত্রৌলির বিদুষী অশ্বিনী ভিদে ও মেওয়াতি ঘরানার প-িত সঞ্জীব অভয়ঙ্করের ‘জাসরাঙ্গি’ পরিবেশনা, বিখ্যাত বেহালাবাদক পদ্মভূষণ ড. এল সুব্রহ্মণ্যনের পরিবেশনা, ওড়িশি নৃত্যের জন্য বিখ্যাত বিদুষী মাধবী মুডগালের পরিবেশনা।
এবারেও থাকছে প-িত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া, প-িত শিবকুমার শর্মা ও পুত্র রাহুল শর্মা, প-িত অজয় চক্রবর্তী, প-িত উল্লাস কশলকর, ওস্তাদ রশিদ খান, প-িত কুশল দাস প্রমুখের মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা।
সম্মেলনে জানানো হয় এবারের উৎসবটি উদ্বোধন করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তার সঙ্গে থাকবেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত হর্ষবর্ধন শ্রিংলা, স্কয়ার টয়লেট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী এবং ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন। স্বাগত বক্তব্য রাখবেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের।
উৎসব সবার জন্য উন্মুক্ত। আগ্রহীরা নিবন্ধন করতে পারবেন অনলাইনে। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকেই নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হবে। গতবারের মতো অনলাইনে নিবন্ধন করে বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবে বিনামূল্যে প্রবেশের পাস সংগ্রহ করতে হবে। যাদের হাতের কাছে ইন্টারনেট সংযোগ নেই, তারা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ধানম-ির বেঙ্গল গ্যালারি, বিমানবন্দর রোড খিলেেত অবস্থিত বেঙ্গল সেন্টারে নিবন্ধন করতে পারবেন বলে নিশ্চিত করেছেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী। এ বিষয়ে শিগগিরই বিস্তারিত জানানো হবে।