Menu

হেমন্তের হিম হিম রাতে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের উষ্ণতা

thumbnail

 

শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের উষ্ণতায় ভেসে যাবার উত্সব শুরু হলো আবার। রাজধানীর সঙ্গীতপিপাসু দর্শক উত্সবে মেতে উঠবার উপলক্ষ পেল আবার। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের সুর আর্মি স্টেডিয়ামের খোলা ময়দানে গভীর রাতে এক ভিন্ন দ্যোতনার সৃষ্টি করেছিল। বাংলাদেশের মানুষের সামনে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের বিশ্বখ্যাত শিল্পীদের পরিবেশনা দেখার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের কল্যাণে। উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের এত বড় আসর আর কখনো বসেনি বাংলাদেশে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হল উত্সবের। এরপর হেমন্তের কুয়াশাসিক্ত পরিবেশে সুরে সমর্পিত ওস্তাদদের সুরের মূর্ছনা।
অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে দর্শক সংখ্যার বিচারে, উত্সবের সময়কাল ও অধিক সংখ্যক শিল্পীর অংশগ্রহণের জন্য এটিই বিশ্বের সবচেয়ে বড় সঙ্গীত উত্সব। এমনটা হতে পারে উত্সব শুরুর আগে আয়োজকরাও কল্পনা করেননি। কিন্তু বাংলাদেশের সঙ্গীতপিপাসু মানুষ সেটাই সম্ভব করে দেখিয়েছে। আর সেই সম্ভাবনা আরো সুন্দর উত্সবের প্রত্যাশা নিয়ে গতকাল পর্দা উঠলো পাঁচ দিনব্যাপী বেঙ্গল উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত উত্সবের।
বৃহস্পতিবার উদ্বোধনী দিনে আর্মি স্টেডিয়ামে তাই সঙ্গীতপিপাসু মানুষের ঢল নেমেছিল। দীর্ঘসময় লাইনে দাঁড়িয়ে সবাই প্রবেশ করেছেন উত্সবস্থলে। এবারের উত্সব উত্সর্গ করা হয়েছে সদ্যপ্রয়াত সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হককে।
আসরের সূচনা হয় নৃত্যনন্দনের শিল্পীদের সম্মেলক নৃত্য পরিবেশনের মধ্য দিয়ে। শর্মিলা বন্দোপাধ্যায়ের পরিচালনায় ‘রবি করোজ্জ্বল’ শিরোনামের এ আয়োজনে রবীন্দ্র নৃত্য-ভাবনা উপস্থাপিত হয়। মণিপুরী নৃত্যশৈলীর এ পরিবেশনা মুগ্ধ করে দর্শকদের। নৃত্যের সঙ্গে পরিবেশিত গানগুলোর মধ্যে ছিলো ‘বাসন্তী, হে ভুবনমোহিনী’, ‘বিপুল তরঙ্গ রে’, ‘ওই পোহাইলো তিমির রাতি’। এছাড়াও ছিলো ব্রজবুলী ভাষার গান।
বিশ্বের বড় বড় সঙ্গীত আসরে বাঁশির সুরে শ্রোতাদের হূদয় মাতিয়ে বাংলাদেশে প্রথমবারের মত এলেন প্রবীণ গোডখিণ্ডি ও রাতিশ তাগড়ে। ২০১০ সালে আর্জেন্টিনায় ওয়ার্ল্ড ফ্লুট ফেস্টিভ্যালসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বড় উত্সবে বাঁশি বাজিয়ে খ্যাতি অর্জন করেছেন প্রবীণ গোডখিণ্ডি। তার বাঁশির সঙ্গে যুগলবন্দিতে ছিলেন রাতিশ ‘ইনসিঙ্ক’ শোর স্রষ্টা ও ভারতের মিউজিশিয়ান্স ফেডারেশনের সভাপতি রাতিশ তাগড়ে নিজের বেহালাবাদন নিয়ে। তাদের সঙ্গে তবলায় সঙ্গত করেন রামদাস পালসুল।
বাংলাদেশে এই উত্সবে প্রথম এলেন গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীত শিল্পী ড. এল সুব্রহ্ম্যণন। তার বেহালাবাদনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় প্রথম দিনের আয়োজন। বেহালার সুরে ভোর যেন নতুন আলো নিয়ে উদ্ভাসিত হল শ্রোতার হূদয়ে। সে স্নিগ্ধতাকে সঙ্গী করে ঘরে ফেরেন আর্মি স্টেডিয়ামের শ্রোতারা। ড. এল সুব্রহ্ম্যণনের সঙ্গে তবলায় সঙ্গত করেন পণ্ডিত তন্ময় বসু।
পাঁচদিনের এ উত্সবের উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। সম্মানিত অতিথি ছিলেন ভারতীয় হাইকমিশনার হর্য বর্ধন শ্রীংলা, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী এবং ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী সেলিম আর এফ হোসেন। এর আগে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের।
উদ্বোধনী পর্ব শেষে খেয়াল নিয়ে মঞ্চে আসেন বিদুষী গিরিজা দেবী। সেনিয়া ও বেনারস ঘরানার প্রবাদপ্রতিম কণ্ঠশিল্পী গিরিজা দেবীর কণ্ঠের মুগ্ধতা ছড়িয়ে পড়ে আর্মি স্টেডিয়াম জুড়ে। তার সঙ্গে তবলায় গোপাল মিশ্র ও সারাঙ্গিতে সঙ্গত করেন মুরাদ আলি খান।
এরপর সরোদবাদন নিয়ে মঞ্চে আসেন আলাউদ্দিন খাঁর দৌহিত্র ও আলি আকবর খাঁর পুত্র ওস্তাদ আশিষ খাঁ। গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনয়ন পাওয়া এ শিল্পীর সঙ্গে তবলায় সঙ্গত করেন পণ্ডিত বিক্রম ঘোষ।
‘জাসরাঙ্গি’ শিরোনামে খেয়াল যুগলবন্দি নিয়ে এরপর মঞ্চে আসেন জয়পুর আত্রৌলি ঘরনার অন্যতম শিল্পী বিদুষী অশ্বিনী ভিদে দেশপাণ্ডে ও মেওয়াতি ঘরানার প্রখ্যাত শিল্পী পণ্ডিত সঞ্জীব অভয়ংকর। তাদের সঙ্গে তবলায় সঙ্গত করেন আজিঙ্কা যোশি ও রোহিত মজুমদার।
আজকের আয়োজন
আজ শুক্রবার উত্সবের দ্বিতীয় দিনের সূচনাতেই ওড়িসি নৃত্য পরিবেশন করবেন বিদুষী মাধবী মুডগাল ও তার শিষ্য আরুশি মুডগাল। দলীয় তবলা পরিবেশন করবেন বেঙ্গল পরম্পরা সঙ্গীতালয়ের শিক্ষার্থী শিল্পীরা। খেয়াল পরিবেশন করবেন বাংলাদেশের শিল্পী প্রিয়াঙ্কা গোপ। সন্তুরে ঝংকার তুলবেন শিল্পী রাহুল শর্মা। কণ্ঠে দলীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত পরিবেশন করবেন মোহাম্মদ শোয়েব ও তার দল। সেতার সুর তুলবেন সেতারে রাগসঙ্গীতের স্বতন্ত্র রূপকার পূর্বায়ণ চট্টোপাধ্যায়। খেয়াল পরিবেশন করবেন পণ্ডিত উলহাস কশলকার। উত্সবে নতুন যুক্ত হওয়া ম্যান্ডোলিন বাদনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে দ্বিতীয় দিনের আয়োজন। সঙ্গে থাকবে বাঁশি যা পরিবেশন করবেন গ্রামি অ্যাওয়ার্ড মনোনয়নপ্রাপ্ত বংশীবাদক পণ্ডিত রনু মজুমদার ও ম্যান্ডোলিনের রূপকার প্রয়াত ইউ শ্রীনিবাসের ভাই ইউ রাজেশ।