Press Release – Day 2
২৫.১১.২০১৬
শেষ হলো বেঙ্গল উচ্চাঙ্গ সংগীত উৎসব ২০১৬-এর দ্বিতীয় দিনের আয়োজন
পাঁচ দিনব্যাপী বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবের দ্বিতীয় দিনের আয়োজন শুরু হয় ২৫ নভেম্বর শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় বনানীর আর্মি স্টেডিয়ামে।
শুরুতেই ওডিশি নৃত্য পরিবেশন করেন বিদুষী মাধবি মুডগাল ও আরুশি মুডগাল। মাধবী মুডগাল নটরাজ ও অষ্টপদি পরিবেশন করেন। আরুশি মুডগাল আহলাদ পরিবেশন করেন রাগ সাহানায়। এছাড়া তিনি রবীন্দ্রসংগীত ‘হেমন্তে কোন বসন্তেরই বাণী’ গানে নৃত্য পরিবেশন করেন। ভৈরবী পল্লবী পরিবেশন করেন দুজন একসঙ্গে। কণ্ঠ সহযোগিতায় ছিলেন মনিকুন্তলা ভৌমিক ও ক্ষীতি প্রকাশ মহাপাত্র, পাখওয়াজে ছিলেন জিতেন্দ্র কুমার সাইন, সেতারে ইয়ার মোহো ও বাঁশিতে ছিলেন শ্রীনিবাস সত্যপঠী।
পরিবেশনা শেষে শিল্পীদের হাতে উৎসব স্মারক তুলে দেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরেটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান।
এরপর ছিল বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের শিক্ষার্থীদের দলীয় তবলা পরিবেশনা। ফাহমিদা নাজনীন, সুপান্থ মজুমদার, এম জে জে ভুবন, পঞ্চম স্যানাল, প্রশান্ত ভৌমিক, চিন্ময় ভৌমিক ও নুশরাত ই জাহান দলগতভাবে পরিবেশন করেন তবলা। তারা তিনতাল পরিবেশন করেন। হারমোনিয়ামে ছিলেন মিলিন্দ কুলকার্নি। পরিবেশনা শেষে বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের শিক্ষক সুরেশ তালওয়ালকার মঞ্চে উঠে চমৎকার পরিবেশনার জন্য শিক্ষার্থীদের শুভকামনা জানান। সবশেষে শিল্পীদের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ।
এরপর খেয়াল পরিবেশন করেন প্রিয়াঙ্কা গোপ। তিনি রাগ বাগেশ্রীতে খেয়াল ও কৌশিকধ্বনিতে ঠুমরী পরিবেশন করেন। তবলায় ছিলেন ইফতেখার আলম প্রধান। হারমোনিয়ামে সহযোগিতা করেন উদয় মালাকার ও সারঙ্গিতে ছিলেন মুরাদ আলী খান। পরিবেশনা শেষে শিল্পীদের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান জনাব আবুল খায়ের।
পরের পরিবেশনায় সন্তুরে ঝঙ্কার তোলেন রাহুল শর্মা। রাগ গাবতিতে আলাপ জোড় ঝালা এবং রূপক তাল, মধ্যালয় এবং দ্রুত তিনতালে তিনটি কম্পোজিশন বাজিয়ে শোনান তিনি। তাঁর সঙ্গে তবলায় তাল দেন সত্যজিৎ তালওয়ালকার। বাজনা পর্ব শেষ হলে শিল্পীদের হাতে উৎসবের সম্মাননা স্মারক তুলে দেন বিশিষ্ট রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী শামা রহমান।
এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের শিক্ষক মোহাম্মদ শোয়েব ও তাঁর দল দলীয় কণ্ঠসঙ্গীত শোনান। তারা রাগ দরবারি পরিবেশন করেন। পরিবেশনা শেষে তাদের হাতে উৎসব স্মারক তুলে দেন চিত্রশিল্পী আবুল বারক আলভি।
সেতারের সুরে দর্শক-শ্রোতাদের মুগ্ধ করেন পূর্বায়ন চট্টোপাধ্যায়। তিনি রাগ হেম ললিতে আলাপ জোড় ঝালা এবং গৎ পরিবেশন করেন। এছাড়া লোক সুরে ধুন বাজিয়ে শোনান। তাঁর সঙ্গে তবলায় ছিলেন অনুব্রত চ্যাটার্জী ও তানপুরায় মুশফিকুল ইসলাম। পরিবেশনা শেষে শিল্পীর হাতে উৎসব স্মারক তুলে দেন ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ।
পণ্ডিত উল্লাস কশলকার খেয়াল পরিবেশন করেন পরবর্তী পরিবেশনায়। তিনি প্রথমে রাগ বসন্ত বাহার পরিবেশন করেন। তারপর রাগ সোহনি এবং রাগ খাম্বাজে ঠুমরী ও তারানা পরিবেশন করেন। তাকে তবলায় সঙ্গত করেন পণ্ডিত সুরেশ তালওয়ালকার, হারমোনিয়ামে মিলিন্দ কুলকার্নি এবং তানপুরায় অভিজিৎ কুণ্ডু ও উজ্জ্বল কুমার মালাকার। পরিবেশনা শেষে শিল্পীর হাতে উৎসবের সম্মাননা স্মারক তুলে দেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।
দ্বিতীয় দিনের শেষ পরিবেশনা ছিল পণ্ডিত রনু মজুমদার ও ইউ. রাজেশের। তারা বাঁশি ও ম্যান্ডোলিন পরিবেশন করেন। রনু মজুমদার বাঁশিতে মঙ্গল ভৈরব ও ইউ. রাজেশ ম্যান্ডোলিনে রাগ অমৃত বর্ষিণী পরিবেশন করেন। রাগ নট ভৈরব পরিবেশন করেন দুজন একসঙ্গে। শেষে দর্শকদের অনুরোধে ভাওয়াইয়া পরিবেশন করে পরিবেশনা শেষ করেন তারা। শিল্পীদের মৃদঙ্গে সহায়তা করেন এস ভি রামানি এবং তবলায় ছিলেন পণ্ডিত অভিজিৎ ব্যানার্জি।
পরিবেশনা শেষে শিল্পীদের হাতে উৎসব স্মারক তুলে দেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান জনাব আবুল খায়ের।
২৬ নভেম্বর তৃতীয় দিনের উৎসব শুরু হবে সন্ধ্যা ৭টায়। চলবে পরদিন ভোর ৫টা ১০ পর্যন্ত। তৃতীয় দিনের উৎসবে অংশ নেবেন বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের শিক্ষার্থীবৃন্দ (সরোদ দলীয়), শশাঙ্ক সুব্রহ্ম্যণন (বাঁশি), ড. প্রভা আত্রে (খেয়াল), পণ্ডিত অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় (তবলা), পণ্ডিত উদয় ভাওয়ালকার (ধ্রুপদ), পণ্ডিত সঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায় (সেতার) এবং ওস্তাদ রাশিদ খান (খেয়াল)।
সংগীত উপভোগের পাশাপাশি শ্রোতাদের জন্য খাবার ও পানীয়ের ব্যবস্থা রয়েছে উৎসব প্রাঙ্গণেই। এছাড়া বিভিন্ন স্টলে পাওয়া যাবে আইস মিডিয়ার ম্যাগাজিন ও বেঙ্গল পাবলিকেশনসের বই। রয়েছে ডেইলি স্টার বুকস ও প্রথমা প্রকাশনী। অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণে আরও রয়েছে অরণ্য, বেঙ্গল ক্রিয়েশনস, ম্যাংগো মোবাইল, বেঙ্গল ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেকচার, ল্যান্ডস্কেপ ও সেট্লমেন্ট এর ‘আগামীর ঢাকা’ প্রদর্শনী। আছে ব্র্যাক ব্যাংকের এটিএম বুথ। সাংবাদিকদের জন্য থাকছে ওয়াইফাই জোন।
বেঙ্গল ফাউন্ডেশন আয়োজতি বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব ২০১৬-এর নিবেদক স্কয়ার গ্রুপ। আয়োজন সর্মথন করছে ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড। অনুষ্ঠানে সম্প্রচার সহযোগী মাছরাঙা টেলিভিশিন। মিডিয়া পার্টনার আইস বিজনেস টাইমস। আতিথেয়তা সহযোগী র্যাডিসন হোটেল। সার্বিক সহযোগিতায় বেঙ্গল গ্রুপ। অনুষ্ঠান আয়োজিত হচ্ছে বেঙ্গল ডিজিটাল, ম্যাংগো, বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয় ও পারফেক্ট হারমনি প্রোডাকশনস্ সিঙ্গাপুরের সহযোগিতায়। ইভেন্ট ব্যবস্থাপনা করছে ব্লুজ কমিউনিকেশনস।
গত চার বছর ধরে আয়োজিত ‘বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব’ শিল্পী ও দর্শকের অংশগ্রহণের নিরিখে এরই মধ্যে এই উপমহাদেশে তথা বিশ্বে র্সবাধিক বড় পরসিরে উচ্চাঙ্গসংগীতের আসর হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এ বছর উৎসবটি উৎর্সগ করা হয়েছে সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের (১৯৩৫-২০১৬) স্মৃতির উদ্দেশ্যে।